সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়া মুরগির নাম ও মুরগি কতদিন পরে ডিম দেয়
ডিম আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য। এটি যেমন পুষ্টিগুণে ভরপুর, তেমনি সহজলভ্য ও তুলনামূলকভাবে কম খরচে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ডিম একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন উৎস হিসেবে গণ্য হয়।
এই চাহিদা মেটাতে খামারিরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জাতের মুরগি পালন করে থাকেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়া মুরগির জাত কোনটি? আর মুরগি সাধারণত কতদিন পর ডিম পাড়া শুরু করে?
এই আর্টিকেলে আমরা জানব—
- বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়া মুরগির নাম
- মুরগি কতদিন পরে ডিম পাড়া শুরু করে
- ডিম উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
-
কোন জাতের মুরগি পালন করবেন?
- মুরগিকে সুস্থ রাখার উপায়
- মুরগির ডিম পাড়া বৃদ্ধি করা উপায়
-
মুরগির বিভিন্ন উৎপাদনের সময় ও জাত ভেদে পার্থক্য
- উপসংহার
সবচেয়ে বেশি ডিম পাড়া মুরগির নাম
১. হাই-লাইন ব্রাউন
এই জাতটি বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় লেয়ার মুরগি। হাই-লাইন ব্রাউন বছরে গড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০টি পর্যন্ত ডিম দিতে পারে। এদের ডিমের রঙ বাদামি এবং গড় ওজন প্রায় ৬০ গ্রাম। এরা তুলনামূলকভাবে শান্ত স্বভাবের এবং সহজে খামারের পরিবেশে মানিয়ে নেয়। ফলে এদের পালন করা সহজ এবং লাভজনক।
২. লোহমান ব্রাউন
লোহমান ব্রাউন জাতটিও খুব জনপ্রিয় একটি লেয়ার জাত। বছরে প্রায় ২৮০ থেকে ৩২০টি ডিম দেয়। ডিমের আকার বড় এবং গুণগত মান ভালো। এই জাতটি বিশেষ করে ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ব্যাপক হারে পালন করা হয়। বাংলাদেশের অনেক খামারেও এখন এই জাত দেখা যায়।
৩. আইজাব্রাউন
আইজাব্রাউন একটি হাইব্রিড লেয়ার জাত যা ৩২০টির বেশি ডিম দিতে পারে বছরে। এরা দেখতে খয়েরি এবং স্বাস্থ্যবান হয়। এই জাতের মুরগি অনেক দিন ধরে ডিম দিয়ে যেতে পারে। খাদ্য গ্রহণ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, ও পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়ার দিক থেকে এরা অনেক ভালো।
৪. শেভার ব্রাউন
এই জাতের মুরগিও বছরে প্রায় ২৯০-৩২০টি ডিম দিতে পারে। এদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো—সহজ রক্ষণাবেক্ষণ ও দীর্ঘস্থায়ী উৎপাদনক্ষমতা। নিয়মিত যত্ন ও ভালো পুষ্টিকর খাদ্য দিলে দীর্ঘ সময় ধরে ডিম দিতে পারে।
৫. দেশি মুরগি
দেশি মুরগি স্বাভাবিকভাবে বছরে গড়ে ৮০ থেকে ১২০টি ডিম দেয়। যদিও এরা তুলনামূলকভাবে কম ডিম দেয়, তবে এদের ডিমের স্বাদ, পুষ্টিগুণ এবং বাজারে চাহিদা অনেক বেশি। গ্রামাঞ্চলে দেশি মুরগির চাহিদা সবসময় থাকে।
মুরগি কতদিন পরে ডিম পারা শুরু করে
মুরগি কতদিন বয়সে ডিম পাড়া শুরু করবে তা মূলত নির্ভর করে—
মুরগির জাত
পুষ্টি
আলো
তাপমাত্রা
খামারের পরিবেশ
নিচে বিভিন্ন জাত অনুযায়ী ডিম পাড়ার সময়সীমা তুলে ধরা হলো:
১. লেয়ার মুরগি
বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদনের জন্য যেসব লেয়ার জাত পালিত হয়, তারা সাধারণত ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহ বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। হাই-লাইন ব্রাউন, লোহমান ব্রাউন, আইজাব্রাউন ইত্যাদি জাত এদের মধ্যে পড়ে। সঠিক খাবার, আলো ও পরিচর্যা পেলে এরা ১৮ সপ্তাহ থেকেই ডিম দিতে শুরু করে।
২. ব্রয়লার জাত
ব্রয়লার মুরগির মূল উদ্দেশ্য হলো মাংস উৎপাদন। তবে অনেক সময় দেখা যায়, পুরনো ব্রয়লার মুরগি কিছুসংখ্যক ডিম দেয়। সাধারণত এরা ৫-৬ মাস বয়সে ডিম দিতে পারে, কিন্তু তা তুলনামূলকভাবে কম এবং অপ্রতিসম হতে পারে। এদের ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা খুব কম।
৩. দেশি মুরগি
দেশি মুরগি সাধারণত ৬ থেকে ৭ মাস বয়সে ডিম পাড়া শুরু করে। তবে এদের ডিম পাড়ার চক্র তুলনামূলকভাবে ধীর। তারা কয়েক মাস ডিম দেয়, তারপর বিরতি নেয়, আবার দেয়। এদের ডিম বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়।
ডিম উৎপাদনের উপর প্রভাব ফেলা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ
সঠিক জাত নির্বাচন করা যেমন জরুরি, তেমনি মুরগির সুষ্ঠু যত্ন ও পরিবেশ নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলো ডিম উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলে:
খাদ্য ও পুষ্টিঃ
উচ্চ মানের প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, মিনারেল ও ভিটামিনযুক্ত খাবার ডিম উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি দিতে হবে।
আলোঃ
মুরগির জন্য দিনে অন্তত ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা আলো থাকা উচিত। প্রাকৃতিক আলোর ঘাটতি থাকলে কৃত্রিম আলো ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়, যাতে ডিম উৎপাদন স্থায়ী হয়।
তাপমাত্রাঃ
তাপমাত্রা খুব গরম বা ঠান্ডা হলে মুরগির দেহের হরমোন ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, ফলে ডিম উৎপাদন কমে যায়। আদর্শ তাপমাত্রা ২১-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়া ভালো।
খাঁচার পরিবেশঃ
খাঁচা বা খামার সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। ময়লা, দুর্গন্ধ, পোকামাকড় বা রোগজীবাণু থাকলে তা মুরগির স্বাস্থ্য এবং ডিমের মান উভয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ও টিকাঃ
মুরগিকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর টিকা দেওয়া জরুরি। যেমন নিউক্যাসেল, গাম্বোরো, রানি খেত, ইত্যাদি। অসুস্থ মুরগি ডিম দেওয়া বন্ধ করে দিতে পারে।
মানসিক চাপ ঃ
পরিবেশগত চাপ যেমন—ধ্বনি দূষণ, অতিরিক্ত ভিড়, পরিবেশ পরিবর্তন ইত্যাদি মুরগির ডিম উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। মুরগিকে স্বাচ্ছন্দ্যময় পরিবেশে রাখা উচিত।
কোন জাতের মুরগি পালন করবেন?
আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে ডিম উৎপাদন করতে চান, তাহলে হাই-লাইন ব্রাউন, লোহমান ব্রাউন, আইজাব্রাউন ইত্যাদি জাতের মুরগি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ এই জাতগুলো দ্রুত ডিম দেওয়া শুরু করে এবং বছরে গড়ে ৩০০টির বেশি ডিম দেয়।
অন্যদিকে, যদি আপনি দেশীয় ডিমের স্বাদ ও বাজার মূল্য বিবেচনায় রাখেন, তাহলে দেশি মুরগি পালন করতে পারেন। যদিও কম ডিম দেয়, তবে দাম বেশি পাওয়া যায়।
যাদের খুব বেশি বাজেট নেই, তারা ছোট পরিসরে দেশি মুরগি দিয়ে শুরু করতে পারেন এবং ধীরে ধীরে উন্নত জাতের লেয়ার মুরগি নিতে পারেন।
মুরগিকে সুস্থ রাখার উপায়
মুরগির ডিম পাড়া বৃদ্ধি করার উপায়
মুরগির বিভিন্ন উৎপাদনের সময় ও জাত ভেদে পার্থক্য
উপসংহার
ডিম উৎপাদন একটি লাভজনক খাত, তবে এর জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, সঠিক জাত নির্বাচন এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা। হাই-লাইন ব্রাউন বা লোহমান ব্রাউন জাতের মুরগি সবচেয়ে বেশি ডিম দেয়, তবে দেশি মুরগির চাহিদাও কম নয়।
আপনি যদি পরিকল্পিতভাবে খামার পরিচালনা করেন, তাহলে সহজেই মাসে হাজার হাজার টাকার ডিম বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। আশা করি এই লেখাটি আপনাকে উপকারে আসবে।
যদি আপনার মনে আরও কোনো প্রশ্ন থাকে বা আপনি কোনো নির্দিষ্ট জাত নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান, তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url