বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ আপনি কি এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা পেতে চান? তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। আপনি যদি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়েন তাহলে সম্পূর্ণ ধারণা আপনি এখানেই পাবেন।
ঘুমের মধ্যে বাচ্চাদের ঝাঁকুনি প্রায় সময় হয়ে থাকে। তাই এই বিষয়ে সবার জানা
উচিত। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কেন বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকনি হয় ও এটা
কিসের লক্ষণ এবং এ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নিজের যে অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন
- বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
- ঘুমের আগে শরীরের স্বাভাবিক মায়োক্লোনিক ঝাঁকুনি
- নিউরোলজিক্যাল সমস্যা ও ঘুমের ঝাঁকুনি সম্পর্ক
- ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাব্য লক্ষণ
- ভিটামিন বি ও ডি কমপ্লেক্সের ঘাটতির প্রভাব
- নিদ্রাহীনতা ও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ঝাঁপনি
- ওষুধ বা টিকা নেওয়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঝাঁকুনি
- অতিরিক্ত উত্তেজনা বা ভয়ের কারণে ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি
- বাচ্চাদের ঠিকমত ঘুম না হওয়ার কারণ
- প্রতিদিন ঝাঁকুনি হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
- বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি থেকে মুক্তির উপায়
- উপসংহারঃবাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি কিসের লক্ষণ
ঘুমের আগে শরীরের স্বাভাবিক মায়োক্লোনিক ঝাঁকুনি
এই ঝাঁকুনির সঠিক কারণ পুরোপুরি নিশ্চিত নয়, তবে বেশ কয়েকটি কারণকে দায়ী করা হয়। যেমন: ঘুমের সময় শরীরের পেশী শিথিল হলে মস্তিষ্ক ভুল করে ভাবে আপনি পড়ে যাচ্ছেন এবং প্রতিক্রিয়ায় শরীরকে নাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মানসিক চাপ, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ, ঘুমের অভাব, বা ঘুমের সময় অনিয়ম এই ঝাঁকুনি সৃষ্টি করতে পারে।
এটি সাধারণত কোনো গুরুতর সমস্যা নয় এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে যদি ঘন ঘন হয় বা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। এই সমস্যা কমাতে চাইলে নিয়মিত ঘুমের রুটিন অনুসরণ করুন, ঘুমের আগে রিল্যাক্সিং কার্যকলাপে মনোযোগ দিন, এবং সন্ধ্যার পর ক্যাফেইন বা নিকোটিন এড়িয়ে চলুন।
নিউরোলজিক্যাল সমস্যা ও ঘুমের ঝাঁকুনি সম্পর্ক
সাধারণ মায়োক্লোনিক ঝাঁকুনি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রতিক্রিয়া এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা কোনো নিউরোলজিক্যাল সমস্যার ইঙ্গিত দেয় না। তবে যদি ঝাঁকুনির ধরন অস্বাভাবিক হয় যেমনঃ খুব ঘন ঘন হয়, ঘুমের অনেক সময়জুড়ে থাকে, বা শরীরের বড় অংশ কাঁপে। তাহলে এটি মায়োক্লোনাস নামক নিউরোলজিক্যাল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। মায়োক্লোনাস হচ্ছে এমন একটি অবস্থায়, যেখানে মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণে অস্বাভাবিকভাবে মাংসপেশীতে হঠাৎ ও বারবার সংকোচন হয়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের মাধ্যমে EEG বা স্নায়ুপরীক্ষা করানো প্রয়োজন হতে পারে।
শিশুরা ঘুমের মধ্যে মাঝে মাঝে হাত-পা নাড়াতে পারে, যা সাধারণ বিকাশের অংশ। তবে যদি এই ঝাঁকুনি খুব তীব্র হয়, শরীর শক্ত হয়ে যায়, মুখের রঙ বদলে যায়, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে বা শিশু জেগে উঠতে পারে না তবে এটি খিঁচুনির লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় "রোল্যান্ডিক এপিলেপ্সি" বা "নাইটটাইম সিজার" নামক নিউরোলজিক্যাল সমস্যা শিশুদের ঘুমের মধ্যে দেখা দেয়। শিশুর ঘুমের মাঝে বারবার ঝাঁকুনি বা চমকে ওঠা থাকলে তা অবহেলা না করে শিশু-স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজিস্ট পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি হলে সাধারণত দেখা যায় শিশুর পুরো শরীর বা শরীরের কিছু অংশ কাঁপতে থাকে, চোখ উল্টে যেতে পারে, থুতু বের হয়, বা কিছু সময়ের জন্য শিশুর জ্ঞান থাকে না। অনেক সময় শিশুর দেহ ঢলে পড়ে অথবা নিঃশ্বাসের সমস্যা হয়। খিঁচুনি চলাকালে শিশুকে পাশে কাত করে শোয়াতে হয়, মুখে কিছু দেওয়া যাবে না। যদি এমন ঘটনা একাধিকবার ঘটে, EEG ও ব্রেইন ইমেজিং পরীক্ষা করে কারণ নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসকের মাধ্যমে নিয়মিত ফলো-আপ ও প্রয়োজনে খিঁচুনির ওষুধ দেওয়া হয়।
ঘুমের মধ্যে খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাব্য লক্ষণ
শিশুরা সাধারণ ঘুমের সময় সামান্য নড়াচড়া বা কাত-বদল করে, যা স্বাভাবিক। তবে যদি ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে পুরো শরীর কেঁপে ওঠে, হাত-পা টান টান হয়ে যায়, অথবা শরীর অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপতে থাকে, তাহলে সেটি খিঁচুনির লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময় খিঁচুনির সময় শিশু বিছানা থেকে পড়ে যায় বা অস্বাভাবিকভাবে বাঁকা হয়ে পড়ে থাকে। এই লক্ষণগুলো কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
খিঁচুনির সময় শিশুর মুখে ফেনা চলে আসা, জিভ কামড়ে ধরা, দাঁত ঘষাঘষি করা, চোখ উল্টে যাওয়া বা চোখ বন্ধ করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপা ইত্যাদি দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে ঠোঁট, আঙুল বা চোখের নিচে নীলচে রঙ হতে পারে, যা রক্ত-অক্সিজেনের স্বল্পতার ইঙ্গিত দেয়। অনেক শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাস থেমে যেতে পারে বা ভারী ও গম্ভীর হয়ে পড়ে, যা আশঙ্কাজনক একটি লক্ষণ।
খিঁচুনির পরে অনেক শিশু দীর্ঘ সময় অচেতন থাকে বা ঘুমেই ঢলে পড়ে। আবার জেগে উঠলেও শিশুটি বিভ্রান্ত থাকতে পারে, কথা বলতে না পারা, চোখে ভীতি বা ক্লান্তি প্রকাশ করতে পারে। কোনো কোনো শিশু বুঝতে পারে না কোথায় আছে, অথবা কী ঘটেছে। খিঁচুনির এমন লক্ষণ একাধিকবার দেখা দিলে দ্রুত শিশু নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন এবং EEG বা ব্রেইন স্ক্যান করানো দরকার হতে পারে।
ভিটামিন বি ও ডি কমপ্লেক্সের ঘাটের প্রভাব
নিদ্রাহীনতা ও অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ঝাঁপনি
ওষুধ বা টিকা নেওয়ার পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঝাঁকুনি
অতিরিক্ত উত্তেজনা বা ভয়ের কারণে ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি
বাচ্চাদের ঠিকমত ঘুম না হওয়ার কারণ
বাচ্চারা যদি স্কুলের চাপ, পরিবারে সমস্যার মধ্যে থাকে বা তাদের মনের মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা থাকে, তাহলে তারা আরামদায়ক ঘুম পায় না। মানসিক উত্তেজনা ও চিন্তা তাদের মস্তিষ্ককে শান্ত হতে দেয় না, ফলে ঘুমাতে সমস্যা হয়।
যদি ঘরের আলো বেশি থাকে, শব্দ থাকে বা অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা হয়, তাহলে বাচ্চারা আরামদায়ক ঘুম পায় না। পাশাপাশি, ঘুমানোর ঠিক সময় না থাকা, বেশি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার বা অনিয়মিত রুটিনও ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন শ্বাসপ্রশ্বাসে বাধা অ্যাডিনয়েড, টনসিল বড় হওয়া, এলার্জি, দন্তব্যথা বা পেটের সমস্যা বাচ্চাদের ঘুম ভাঙিয়ে দিতে পারে। এছাড়া, ঘুমের রোগ যেমন রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম বা ঘুম apnea থাকলেও তারা ঠিকমত ঘুমাতে পারে না।
প্রতিদিন ঝাঁকুনি হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
প্রতিদিন ঝাঁকুনি হলেও সাধারণত যদি ঝাঁকুনি সামান্য ও অল্পক্ষণ স্থায়ী হয়, আর বাচ্চার আচরণ স্বাভাবিক থাকে, তাহলে তা বেশি চিন্তার কারণ নয়। তবে এই ঝাঁকুনি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে বা বৃদ্ধি পেলে সতর্ক হওয়া উচিত।
যদি ঝাঁকুনির সঙ্গে বাচ্চার অজ্ঞান হয়ে পড়া, খিঁচুনি , প্রচণ্ড দুর্বলতা, ভুলে যাওয়া বা স্মৃতিভ্রংশের মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া জরুরি। এ ধরনের লক্ষণ নিউরোলজিক্যাল বা গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
এছাড়া, যদি ঝাঁকুনি রাতে ঘুমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বা দিনের মধ্যে বাচ্চার স্বাভাবিক কাজকর্মে প্রভাব ফেলে, অথবা ঝাঁকুনি বাড়তে থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। দ্রুত সঠিক চিকিৎসা শুরু করলে সমস্যা সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে।
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি থেকে মুক্তির উপায়
বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি সাধারণত নির্দোষ ঘটনা হলেও অনেক সময় এটা তাদের ঘুমকে বিঘ্নিত করতে পারে। নিচে বাচ্চাদের ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনি থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় দেয়া হলোঃ
১. ঘুমের রুটিন ঠিক করা: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে ও ওঠার চেষ্টা করুন। নিয়মিত ঘুমের রুটিন বাচ্চার মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ঘুম চক্র বজায় রাখতে সাহায্য করে।
২. ঘুমের পরিবেশ শান্ত ও আরামদায়ক করা: ঘরের আলো কমিয়ে শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে বাচ্চা অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা থেকে মুক্ত থাকে।
৩. স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমানো: বাচ্চার দৈনন্দিন জীবনে স্ট্রেস বা উদ্বেগ থাকলে সেটি ঝাঁকুনি বাড়াতে পারে। ভালো মনোযোগ দিন, তাদের কথা শুনুন ও মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।
৪.বিশ্রাম নিশ্চিত করা: বাচ্চাদের প্রয়োজন মতো পর্যাপ্ত ঘুম দেওয়া জরুরি।
৫. ক্যাফেইন ও চিনিযুক্ত খাবার এড়ানো: সন্ধ্যার পর বাচ্চাদের ক্যাফেইন বা চিনিযুক্ত খাবার না দেওয়াই ভাল।
৬. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া: যদি ঝাঁকুনি অতিরিক্ত বেশি হয়, ঘুমের গুণগত মান খারাপ হয়, বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সঙ্গে থাকে, তাহলে অবশ্যই পেডিয়াট্রিশিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের কাছে রেফার করতে পারেন।
৭. হালকা ম্যাসাজ বা শান্ত সঙ্গীত: ঘুমের আগে হালকা ম্যাসাজ বা সুমধুর সঙ্গীত বাচ্চাকে শান্ত করে ঘুমের ঝাঁকুনি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
সর্বোপরি, ঘুমের ঝাঁকুনি যদি অল্পবয়সী বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত ও মারাত্মক না হয়, তবে সাধারণত এটি ক্ষতিকর নয়। তবে উপরের পরামর্শগুলো অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সমস্যা মোকাবেলা করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url